পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন রকম কাজ করার জন্য যেসব সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই গৃহসামগ্রী হিসেবে পরিচিত। এই সামগ্রীগুলো আমাদের অনেক কাজকে সহজ ও আরামদায়ক করে দেয়। উপযুক্তভাবে গৃহসামগ্রী নির্বাচন করে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমরা সময়, শক্তি বাঁচিয়ে অনেক কাজ করতে পারি। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। যেমন-
- রান্নার সামগ্রী- হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, খুক্তি, চুলা, বঁটি, দা, ছুরি, কেটলি, ব্লেন্ডার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি।
- খাবার কাজের সামগ্রী প্লেট, বাটি, গামলা, গ্লাস, জগ, চামচ, কাঁটা চামচ, কাপ, পিরিচ, ট্রে, ট্রলি ইত্যাদি।
- ধোয়া ও পরিষ্কার করার সামগ্রী মোছার কাপড়, ব্রাশ, ঝাড়ু, বালতি ইত্যাদি।
- লন্ড্রীর কাজের সামগ্রী সাবান, বালতি, মগ, কাঠের টুকরা, ক্লিপ, হ্যাঙ্গার, ইস্ত্রি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি।
- সেলাইয়ের সামগ্রী সুচ, সুতা, মাপার ফিতা, কাঁচি, সেলাই মেশিন ইত্যাদি।
- বাগান করার সামগ্রী কোদাল, শাবল, নিড়ানি, ঝাঁজরি, বালতি, মগ, কাঁচি ইত্যাদি।
- পড়ালেখার সামগ্রী – বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি।
- অন্যান্য সামগ্রী - প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স, হাতুড়ি, করাত, ক্রুড্রাইভার, টেস্টার, খেলার সামগ্রী ইত্যাদি।
গৃহসামগ্রী ক্রয়ের নীতি- গৃহসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা না থাকলে, অনেক সময় সঠিক সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব হয় না। অর্থের বিনিময়ে সামগ্রীগুলো কেনা হয়। তাই সামগ্রী ক্রয়ের সময় যাতে অর্থের অপচয় না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আর তাই গৃহসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব নীতি অনুসরণ করতে হবে তা হলো।
- প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা
- ক্রয় পরিকল্পনা
- গুণাগুণ যাচাই
- বাজারমূল্য সম্পর্কে ধারণা
প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা- আমাদের অর্থসম্পদ সীমিত বলে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী একসাথে ক্রয় করতে পারি না। তাই প্রয়োজনের ক্রমানুসারে সামগ্রীর একটা তালিকা করে সেখান থেকে যে সামগ্রীটা বেশি জরুরি সেটা আগে ক্রয় করা। যেমন-কোনো পরিবারে একই সময় পানির জগ এবং ফুলদানির চাহিদা থাকলে প্রথমে জগ ও পরে ফুলদানি ক্রয় করতে হবে। বেশি প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো আগে কিনলে চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়।
ক্রয় পরিকল্পনা-পরিকল্পনা ছাড়া গৃহসামগ্রী ক্রয় করলে বেশির ভাগ চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। তাই সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা পরিকল্পনা করতে হবে। কোন সামগ্রী কখন, কোন কাজের জন্য, কোথা থেকে কেনা হবে, কেনার সামর্থ্য আছে কি না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়। যেমন-শহরে চুলা কেনার সময় সংগতি থাকলে বড় পরিবারের জন্য দুই বা ততোধিক বার্নারের গ্যাস চুলা ক্রয় করলে, অল্প সময়ে বেশি রান্না করা যাবে। অন্যদিকে গ্রামে গ্যাসের চুলার চেয়ে মাটির চুলার জ্বালানি সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়।
গুণাগুণ যাচাই- সামগ্রী ক্রয়ের সময় তার গুণাগুণ যাচাই করে কেনা হলে তা লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। সামগ্রীর গুণ বিচারের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন-
১) সময় ও শক্তি বাঁচিয়ে কাজ করার জন্য পণ্য দ্রব্য নির্বাচন করা। অতিরিক্ত ভারী বা বড় আকৃতির সামগ্রীর চেয়ে হাল্কা সহজে নাড়াচাড়া করা যায়, সেগুলো বেশি উপযোগী কারণ এতে সময় ও শক্তি কম খরচ হয়।
২) মূল্য ও উপযোগিতা যাচাই করে সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। অনেক সময় দেশজ কাঁচামালে তৈরি কম মূল্যের সামগ্রী বিদেশি চাকচিক্যময় সামগ্রীর তুলনায় গুণে ও মানে ভালো হয়।
৩) গৃহসামগ্রীগুলো কাজের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন ধাতুর তৈরি হয়। বিভিন্ন ধাতুর বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, যত্ন, সংরক্ষণের উপায় জেনে সামগ্রী ক্রয় করা উচিত। রান্না করার সামগ্রীর মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি পাতিল সুবিধাজনক। আবার ভাজার জন্য লোহার কড়াই উপযোগী। তেমনি প্লেট, গ্লাস, চায়ের কাপ ইত্যাদি কাঁচের হলে তা বেশি গ্রহণীয়। তবে তা ব্যবহারে বেশি সতর্ক হতে হয়।
৪) প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের আগেই সেটা টেকসই কি না তা বিচার করতে হবে। কোনো সামগ্রীর স্থায়িত্ব অনেকাংশে নির্ভর করে তার গঠনপ্রণালী ও ধাতুর বৈশিষ্ট্যের উপর। যেমন-কেটলি, ফ্রাইপ্যান ইত্যাদির হাতগুলো কাঠ বা প্লাস্টিক দিয়ে জোড়া দেওয়া থাকে। তাই দ্রব্যটির জোড়ার অংশগুলো ঠিকভাবে লাগানো হয়েছে কি না তা দেখতে হয়।
বাজারমূল্য সম্পর্কে ধারণা- যেকোনো সামগ্রী কিনতে হলে তার মূল্য যাচাই করে অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যে কেনার চেষ্টা করা উচিত। সেজন্য সামগ্রী কেনার সময় বিভিন্ন দোকান ঘুরে বাজার মূল্য যাচাই করে কিনলে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়।
| কাজ ১- এক বছরে তোমার পড়ালেখার জন্য কী কী সামগ্রী দরকার হয় তার তালিকা তৈরি করো। কাজ ২- কোনো সামগ্রী ক্রয়ের সময় গুণাগুণ যাচাই করলে কী কী সুবিধা হয়, লেখো। |
Read more